Sunday 27 March 2011

দেশী ও বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া মুজিব আমলের বিবরণ


ইতিহাস রচনার নামে বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধু যে মিথ্যাচার ঢুকানো হয়েছে তা নয়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দলের দুঃশাসনের বিবরণগুলো ইতিহাসের গ্রন্থ থেকে অতি সতর্কতার সাথে বাদ দেওয়া হয়েছে। এবং তা ছিল দলগুলোর রাজনীতির স্বার্থে। তবে কোন অপরাধী তার অপরাধ কর্মগুলো লুকানোর যত চেষ্টাই করুক না কেন, সম্পূর্ণ লুকাতে পারে না। সাক্ষী রেখে যায়। তাদরে মধ্যে শেখ মুজিব ও তার সহচরগণ অসংখ্য সাক্ষী রেখে গেছে। আর সেগুলি হল, সে সময়ের দেশী ও বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়া মুজিব আমলের বিবরণ। আগামী দিনের ইতিহাস রচনায় এবিবরণগুলোই গণ্য হবে গুরুত্বপূর্ণ দলীল রূপে। শেখ মুজিব ও তার দল বাংলাদেশকে যে কতটা বিপর্যয়ের মুখে ফেলেছিল সে পরিচয় পাওয়া যাবে সে আমলের ঢাকার পত্রিকাগুলো পড়লে। নিজ ঘরে নিরপত্তা না পেয়ে বহু মানুষ তখন বনেজঙ্গলে লুকিয়েছে। ১৯৭৩ সালের ১৭ আগষ্ট দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত একটি খবরের শিরোনাম ছিল,“নিরাপত্তার আকুতি গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘর”। মূল খবরটি ছিল এরূপঃ “সমগ্র দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতির ফলে এবং মানুষের জান-মাল ও ইজ্জতের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার অভাবে গ্রাম-গঞ্জ ও শহরবাসীর মনে হতাশার মাত্রা দিন দিন বাড়িয়াই চলিয়াছে এবং আইন রক্ষাকারী সংস্থার প্রতি মানুষের আস্থা লোপ পাইতেছে। অবস্থা এমন দাঁড়াইয়াছে যে,চুরি-ডাকাতি, লুঠ-তরাজ তো আছেই, রাজনৈতিক, সামাজিক ও বৈষয়িক কারণে শত্রুতামূলক হত্যাকান্ডের ভয়ে মানুষ বাড়ীঘর ছাড়িয়া অন্যত্র আশ্রয় লইতেছে। যাহারা বিত্তশালী তাহারা শহরের আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ীতে এমনকি শহরের আবাসিক হোটেগুলিতে পর্যন্ত আসিয়া উঠিতেছেন। যাঁহাদের শহরে বাস করিবার সঙ্গতি নাই,তাহার বনে-জঙ্গলে অথবা এখানে-ওখানে রাত্রি কাটাইতেছেন”।

১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকের কিছু খবরের শিরোনাম ছিলঃ “ঝিনাইদহে এক সপ্তাহে আটটি গুপ্তহত্যা”(০১/০৭/৭৩); “ঢাকা-আরিচা সড়কঃ সূর্য ডুবিলেই ডাকাতের ভয়” (০২/০৭/৭৩) “বরিশালে থানা অস্ত্রশালা লুটঃ ৪ ব্যক্তি নিহত” (৪/০৭/৭৩); “পুলিশ ফাঁড়ি আক্রান্তঃ সমুদয় অস্ত্রশস্ত্র লুট” (১২/০৭/৭৩); “লৌহজং থানা ও ব্যাঙ্ক লুট”(২৮/০৭/৭৩); “দুর্বৃত্তের ফ্রি স্টাইল” (০১/০৮/৭৩); “পুলিশ ফাঁড়ি ও বাজার লুটঃ লঞ্চ ও ট্রেনে ডাকাতি”(৩/০৮/৭৩); “এবার পাইকারীহারে ছিনতাইঃ সন্ধা হইলেই শ্মশান”(১১/০৮/৭৩);“চট্টগ্রামে ব্যাংক ডাকাতি,লালদীঘিতে গ্রেনেড চার্জে ১৮ জন আহত, পাথরঘাটায় রেঞ্জার অফিসের অস্ত্র লুট” (১৫/০৮/৭৩); “খুন ডাকাতি রাহাজানিঃ নোয়াখালীর নিত্যকার ঘটনা,জনমনে ভীতি” (১৬/০৮/৭৩); “২০ মাসে জামালপুরে ১৬১৮টি ডাকাতি ও হত্যাকান্ড” (১৭/১১/৭৩); “আরও একটি পুলিশক্যাম্প লুটঃ সুবেদরসহ ৩ জন পুলিশ অপহৃত” (১৩/০৭/৭৩);“যশোরে বাজার লুটঃ দুর্বৃত্তের গুলীতে ২০ জন আহত” (১৮/০৪/৭৪); “রাজশাহীতে ব্যাংক লুট” (২১/৪/৭৪) মুজিব আমলের পত্রিকাগুলো পড়লে চোখে পড়বে এরূপ হাজার হাজার ঘটনা ও বহু হাজার বিয়োগান্ত খবর। পাকিস্তানের ২৩ বছরের ইতিহাসে দুর্বৃত্তির যত না ঘটনা ঘটেছে মুজিবের ৪ বছরে তার চেয়ে বহু গুণ বেশী ঘটেছে। বাংলার হাজার বছরের ইতিহাসে “ভিক্ষার ঝুলী”-এ খেতাব জুটিনি, কিন্তু মুজিব সেটি অর্জন করেছে। অথচ কিছু কাল আগেও গ্রামবাংলার অধিকাংশ মানুষের গৃহে কাঠের দরজা-জানালা ছিল না। ঘরের দরজায় চট বা চাটাই টানিয়ে অধিকাংশ মানুষ পরিবার পরিজন নিয়ে নিরাপদে রাত কাটাতো। কিন্তু মুজিব শুধু খাদ্যই নয়,সে নিরাপত্তাটুকুও কেড়ে নেয়। নিরাপত্তার খোঁজে তাদেরকে ঘর ছেড়ে বন-জঙ্গলে আশ্রয় খুঁজতে হয়। থানা পুলিশ কি নিরাপত্তা দিবে? তারা নিজেরাই সেদিন ভুগেছিল চরম নিরাপত্তাহীনতায়। দুর্বত্তদের হাতে তখন বহু থানা লুট হয়েছিল। বহু পুলিশ অপহৃত এবং নিহতও হয়েছিল। মুজিবের নিজের দলীয় কর্মীদের সাথে তার নিজের পুত্রও নেমেছিল দুর্বৃত্তিতে। সে সময় দৈনিক পত্রিকায় খবর ছাপা হয়েছিলঃ “স্পেশাল পুলিশের সাথে গুলী বিনিময়ঃ প্রধানমন্ত্রীর তনয়সহ ৫ জন আহত”। মূল খবরটির ছাপা হয়েছিল এভাবেঃ “গত শনিবার রাত সাড়ে এগারোটায় ঢাকার কমলাপুর স্পেশাল পুলিশের সাথে এক সশস্ত্র সংঘর্ষে প্রধানমন্ত্রী তনয় শেখ কামাল,তার ৫ জন সাঙ্গপাঙ্গ ও একজন পুলিশ সার্জেন্ট গুলীবিদ্ধ হয়েছে। শেখ কামাল ও তার সঙ্গীদেরকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের নয়,দশ ও তেত্রিশনম্বর কেবিনে ভর্তি করা হয়েছে। আহত পুলিশ সার্জেন্ট জনাব শামীম কিবরিয়াকে ভর্তি করা হয় রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে।” -(গণকন্ঠ ১৯/১২/৭৩)।

ছাত্রলীগের ক্যাডারগণ প্রকাশ্য মানুষ খুন করত -সে বিবরণ বহু পত্রিকায় বহু ভাবে এসেছে। যাদেরকে আওয়ামী লীগ বাঙালীর ইতিহাসে শ্রেষ্ঠ বাঙালী রূপে তুলে ধরছে এ ছিল তাদের আসল চরিত্র। বাংলাদেশের ইতিহাসে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ বা মন্বন্তর এসেছে তিনবার। এর মধ্যে দুই বার এসেছে ব্রিটিশ আমলে। এবং তা ১৭৬১ সালে এবং ১৯৪৩ সালে। তৃতীয়বার এসেছে মুজিব আমলে। পাকিস্তানী আমলে একবারও আসেনি। অথচ এ পাকিস্তান আমলটিকেই আওয়ামী-বাকশালী বুদ্ধিজীবী ও নেতা-কর্মীগণ চিত্রিত পশ্চিম পাকিস্তানীদের উপনিবেশিক শোষনের আমল রূপে। অথচ ১৯৪৭-এ পাকিস্তান আমলের শুরুটি হয়েছিল অনেকটা শূন্য থেকে। তখন অফিস আদালত ছিল না,কলকারখানা ছিল না। সহযোগী প্রতিবেশীও ছিল না। বরং ছিল ভারত থেকে তাড়া খাওয়া লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল উদ্বাস্তুদের ভিড়। মুজিবামলের ন্যায় সেসময় বিদেশ বিদেশ থেকে শত শত কোটি টাকার সাহায্যও আসেনি। কিন্তু সে দিন কোন দুর্ভিক্ষ আসেনি।অথচ হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশী সাহায্য সত্ত্বেও দুর্ভিক্ষ এসেছিল মুজিবামলে। দুর্ভিক্ষ এসেছিল শেখ মুজিবের দূর্নীতি পরায়ন প্রশাসন এবং দলীয় ও ভারতীয় লুটপাটের কারণে। সে সময়ে ঢাকার পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত কিছু খবরের দিকে নজর দেওয়া যাক। বাংদেশের ৭০ জন বিশিষ্ঠ সাংবাদিক, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী এক যুক্ত বিবৃতিতে দেশের পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেনঃ বাংলাদেশের বর্তমান খাদ্যাভাব ও অর্থনৈতিক সঙ্কট অতীতের সর্বাপেক্ষা জরুরী সঙ্কটকেও দ্রুতগতিতে ছাড়াইয়া যাইতেছে এবং ১৯৪৩ সনের সর্বগ্রাসী মন্বন্তর পর্যায়ে পৌঁছাইয়া গিয়াছে।তাঁহারা সরকারের লঙ্গরখানার পরিবেশকে নির্যাতন কেন্দ্রের পরিবেশের শামিল বলিয়া অভিহিত করিয়া বলেনঃ “দুর্ভিক্ষ মানুষ দ্বারা সৃষ্ট এবং একটি বিশেষ শ্রেণীর অবাধ লুন্ঠন ও সম্পদ-পাচারের পরিণতি”। তাঁরা বলেনঃ “খাদ্য ঘাটতি কখনও দুর্ভিক্ষের মূল কারণ হইতে পারে না। সামান্যতম খাদ্য ঘাটতির ক্ষেত্রেও শুধু বন্টন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করা যায়। যদি দেশের উৎপাদন ও বন্টন-ব্যবস্থা নিম্নতম ন্যায়নীতি উপর প্রতিষ্ঠিত থাকিত,দেশের প্রশাসন,ব্যবসা-বাণিজ্য শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে সুবিচারকে নিশ্চিত করার সামান্যতম আন্তরিক চেষ্টাও থাকিত তাহা হইলে যুদ্ধের তিন বছর পর এবং দুই হাজার কোটি টাকারও বেশী বৈদেশিক সাহায্যের পর ১৯৭৪ সনের শেষার্ধে আজ বাংলাদেশে অন্ততঃ অনাহারে মৃত্যুর পরিস্থিতি সৃষ্টি হইত না।” (ইত্তেফাক,অক্টোবর ১,১৯৭৪) সে সময়ের পত্রিকার কিছু শিরোনাম ছিলঃ “চালের অভাবঃ পেটের জ্বালায় ছেলেমেয়ে বিক্রি”-(গণকন্ঠ আগষ্ট ২৩,১৯৭২) “লাইসেন্স-পারমিটের জমজমাট ব্যবসা; যাঁতাকলে পড়ে মানুষ খাবি খাচ্ছে; সিরাজগঞ্জ, ফেণী, ভৈরব, ইশ্বরগঞ্জ ও নাচোলে তীব্র খাদ্যাভাব,অনাহারী মানুষের আহাজারীঃ শুধু একটি কথা, খাবার দাও”- (গণকণ্ঠ আগস্ট ২৯,১৯৭২) “গরীব মানুষ খাদ্য পায় নাঃ টাউটরা মজা লুটছে; গুণবতীতে চাল আটা নিয়ে হরিলুটের কারবার”-(গণকন্ঠ সেপ্টেম্বর ১৯,১৯৭২) “একদিকে মানুষ অনাহারে দিন যাপন করিতেছেঃ অপরদিকে সরকারি গুদামের গম কালোবাজারে বিক্রয় হইতেছে”-(ইত্তেফাক এপ্রিল ৭,১৯৭৩); “এখানে ওখানে ডোবায় পুকুরে লাশ।”(সোনার বাংলা এপ্রিল ১৫,১৯৭৩); “চালের অভাবঃ পেটের জ্বালায় ছেলেমেয়ে বিক্রি; হবিগঞ্জে হাহাকারঃ অনাহারে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু”-(গণকন্ঠ মে ৩,১৯৭৩); “কোন এলাকায় মানুষ আটা গুলিয়া ও শাক-পাতা সিদ্ধ করিয়া জঠর জ্বালা নিবারণ করিতেছে”-(ইত্তেফাক মে ৩,১৯৭৩); “অনাহারে দশজনের মৃত্যুঃ বিভিন্নস্থানে আর্ত মানবতার হাহাকার; শুধু একটি ধ্বনিঃ ভাত দাও”-(গণকন্ঠ মে ১০,১৯৭৩); “লতাপতা, গাছের শিকড়, বাঁশ ও বেতের কচি ডগা, শামুক, ব্যাঙার ছাতা, কচু-ঘেচু পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্যে পরিণতঃ গ্রামাঞ্চলে লেংটা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি”-(ইত্তফাক মে ১০,১৯৭৩); “পটুয়াখালীর চিঠিঃ অনাহারে একজনের মৃত্যু;সংসার চালাতে না পেরে আত্মহত্যা”-(গণকন্ঠ মে ১০, ১৯৭৩); “ওরা খাদ্যভাবে জর্জরিতঃ বস্ত্রাভাবে বাহির হইতে পারে না”-(ইত্তেফাক মে ৩০,১৯৭৩) “আত্মহত্যা ও ইজ্জত বিক্রির করুণ কাহিনী”-(গণকন্ঠ জুন ১,১৯৭৩) “স্বাধীন বাংলার আরেক রূপঃ জামাই বেড়াতে এলে অর্ধ-উলঙ্গ শ্বাশুরী দরজা বন্ধ করে দেয়”- (সোনার বাংলা জুলাই ১৫,১৯৭৩) “গ্রামবাংলায় হাহাকার, কচু-ঘেচুই বর্তমানে প্রধান খাদ্য”-(ইত্তেফাক এপ্রিল,১৯৭৪); “দুঃখিনী বাংলাকে বাঁচাও”-(ইত্তেফাক আগষ্ট ৪,১৯৭৪); “জামালপুরে অনাহারে ১৫০ জনের মৃত্যুর খবর”-(ইত্তেফাক আগষ্ট ১৩,১৯৭৪) “১০দিনে জামালপুর ও ঈশ্বরদীতে অনাহার ও অখাদ্য-কুখাদ্য খেয়ে ৭১ জনের মৃত্যু”-(গণকন্ঠ আগস্ট ২৭, ১৯৭৪)

১৯৭২ সনের ২১ অক্টোবর তারিখে দৈনিক গণকন্ঠে একটি খবর ছিলঃ “পেটের দায়ে কন্যা বিক্রি”। ভিতরে সংবাদটি ছিল এরকমঃ “কিছুদিন পূর্বে কুড়িগ্রাম পৌরসভার সন্নিকটস্থ মন্ডলের হাটনিবাসী রোস্তম উল্লাহর স্ত্রী রাবেয়া খাতুন তার আদরের দুলালী ফাতেমা খাতুনকে (৭ বছর) পৌরসভার জনৈক পিয়ন জমির উদ্দীনের কাছে মাত্র ছয় টাকায় বিক্রি করে দেয়”।১৯৭৩ সালে ৮ই জুলাই সোনার বাংলা “ফেন চুরি” শিরোনামায় এ খবরটি ছাপেঃ “বাঁচার তাগিদে এক মালসা ফেন। দু’দিন না খেয়ে থাকার পর এক বাড়ীর রান্না ঘর থেকে ফেন চুরি করলো সে। চুরি করে ধরা পড়লো। শুকনো মুখো হাড্ডীসার ছেলেটির গালে ঠাশ ঠাশ পড়লো সজোরে থাপ্পর। চোখে অন্ধকার দেখলো সে এবং মাথা ঘুরে পড়ে গেল। গ্রামের নাম দরগাপুর,থানা আশাশুনি,জেলা খুলনা। গাজী বাড়ির বাচ্চা। বয়স সাত-আট বছর। গুটি বসন্তে পিতা মারা গেছে। মা কাজ করে যা পায় তাতে কোলের ভাই-বোন দুটোর হলেও বাকী দুই বোন আর বাচ্চার হয় না। বাচ্চা তাই প্রতিদিন একটা ভাড়া নিয়ে বের হয়। দ্বারে দ্বারে ফেন মাগে, এই ভাবেই তিন ভাই বোন চলে”। ১৯৭৪ সনের ২৩শে মার্চ ইত্তেফাক খবর ছাপে,“মরা গরুর গোশত খাইয়া ভোলা মহকুমার বোরহানু্‌দ্দিন থানার ১০ ব্যক্তি মারা গিয়াছে এবং ৬০ জন অসুস্থ্য হইয়া পড়িয়াছে, -এই খবরে বিস্মিত হইবার না ইহাতে বিশ্বাস স্থাপন না করিবার কিছূ নাই। স্বয়ং সরকারদলীয় স্থানীয় এম. পি.সাংবাদিকদের এই খবর দিয়াছেন। জান বাঁচানোর জন্য মানুষ মরা গরু খাইতে আরম্ভ করিয়াছে,তবু বাঁচিতে পারিতেছে না, বরং মরা গরুর গোশত খাইয়া আরও আগেই মৃত্যুর কোলে ঢলিয়া পড়িতেছে। এ খবর বড় মর্মান্তিক, বড় সাংঘাতিক”। ১৯৭৪ সালের ৪ আগষ্ট সোনার বাংলায় ছাপা হয়, “ঢোল পিটিয়ে মানুষ বিক্রিঃ মানবশিশু আজ নিত্য দিনের কেনা-বেচার পণ্য”। মূল খবরটা ছিল এরূপঃ “হাটের নাম মাদারীগঞ্জ। মহকুমার নাম গাইবান্ধা। সেই মাদারীগঞ্জ হাটে ঘটেছে একটা ঘটনা। একদিন নয়, দু'দিন। ১০ই এবং ১৩ই জুলাই। ১০ই জুলাই এক হাটে এক ব্যক্তি মাত্র একশ টাকার বিণিময়ে তার ৬/৭ বছরের শিশু পুত্রকে বিক্রি করে। দ্বিতীয় দিনে ১৩ জুলাই একই হাটে ৫-৬ বছর বয়সের একটি মেয়ে বিক্রি হয়েছে মাত্র ২৮ টাকায়। প্রথমে বাজারে ঢোল পিটিয়ে প্রচার করা হয় মেয়ে বিক্রি করার ঘোষণা। ঢোল পিটানোর মেয়ে কিনতে ও দেখতে অনেক লোক জমা হয়। অবশেষে আটাশ টাকা দামে মেয়েটি বিক্রি হয়”।

সে সময়ে প্রকাশিত বহু খবরের মধ্যে এ খবরগুলিও ছাপা হয়ঃ ঈশ্বরদীতে ৬ কোটি টাকার তামার তার বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। দু'চার জন যারা ধরা পড়েছে, এবং তারা সবাই মুজিব বাহিনীর লোক। তারা পুলিশ থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ( পূর্বদেশ: ১১ মে, ১৯৭২) পটুয়াখালী থানার বিভিন্ন জায়গায় ডাকাতির হিড়িক পড়ে গেছে। কোন গ্রাম-বন্দরে দিনের বেলা ডাকাতি হয়। পুলিশকে খবর দিলে শেষ করে দেব বলে ভয় দেখায়। ফলে থানায় খবু কমই এজাহার হয়। ডাকাতদের দু'একজন এলএমজি হাতে থানার গেটে মোতায়েন থাকে যাতে দারগা-পুলিশ ডাকাতদের জারিক্রিত কারফিউ লংঘন করতে না পারে। -(পূর্বদেশ : ৩১ মে '১৯৭২) সম্প্রতি পাবনার সুজানগর থানাধীন ছয়টি গ্রামের ১১৮টি বাড়িতে ডাকাতি সংঘটিত হয়। পাবনার পল্লীর লোকগুলো বাড়ি-ঘর ছেড়ে জঙ্গলে রাত কাটায়। (দৈনিক বাংলা : ৩০ আগষ্ট ১৯৭২) দিনমজুর ছাবেদ আলীর স্ত্রী মাত্র ৫ টাকা দামে পেটের দায়ে তার সন্তান বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছে। (সাপ্তাহিক বিচিত্রা: ২০ জুলাই '১৯৭৩) শেষ পর্যন্ত শ্রীমঙ্গলের হেদায়েত উল্লাহকে কাফন ছাড়াই কলাপাতার কাফনে কবরখানায় যেতে হল (বঙ্গবার্তা: ৪ অক্টোবর ১৯৭৩) দেশের ঘরে ঘরে যখন বুভুক্ষু মানুষের হাহাকার তখন বৈদেশিক মুদ্রায় এক কোটি টাকা মূল্যের তাস আমদানি করা হয়েছে। (বঙ্গবার্তা: ১২ ডিসেম্বর, ১৯৭৩) স্বাধীনতা লাভের কয়েক মাসের মধ্যেই ১৪ হাজার কোটি টাকার সম্পদ ভারতে পাচার হয়ে গেছে। -(জাতীয় সংসদে সংসদ সদস্য আতাউর রহমান খানের বক্তৃতা: ২৭ জানুয়ারি '১৯৭৪) কয়েকদনি আগে জয়পুরহাটের মাংলীপাড়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের কবর থেকে কাফন চুরি হয়ে গেছে। -(সাপ্তাহিক অভিমত : ২৭ মে ১৯৭৪) আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলামের সচিব বলেছেন, ১৯৭৩ সালের জুন থেকে ১৯৭৪ সালের জুন পর্যন্ত এক বছরে ঢাকা শহরে তারা ১৪০০ বেওয়ারিশ লাশ দাফন করেছে। আর ১৯৭৪ এর জুলাই হতে১৯৭৫ এর জুলাই পর্যন্ত দাফন করেছে ৬২৮১টি বেওয়ারিশ লাশ। -(ইত্তেফাক: ২১ অক্টোবর ১৯৭৫) সারা দেশে অনাহারে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। প্রতি ৪৮ ঘন্টায় একজনের আত্মহ্ত্যা। -(হক কথা : ১৯ মে ১৯৭৪) গাইবা্ন্ধায় ওয়াগন ভর্তি ৬শ' মণ চাল লুট। রংপুরে ভুখা মিছিল।-(আমাদের কথা : ১৯ এপ্রিল ১৯৭৪) ক্ষুধার্ত মানুষের ঢলে ঢাকার রাজপথ নরকতুল্য। -(হলিডে: ২৯ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪)

১৯৭৪ সালে ৮ই সেপ্টম্বর সোনার বাংলা আরেকটি ভয়ানক খবর ছাপে। খবরের শিরোনাম ছিলঃ“রেকর্ড সৃষ্টিকারী খবরঃ “জঠর জ্বালায় বমি ভক্ষণ”। খবরে বলা হয়,একজন অসুস্থ্য ব্যক্তি গাইবান্ধার রেলওয়ে প্রচুর পরিমাণে বমি করে। বমির মধ্যে ছিল ভাত ও গোশত। দু’জন ক্ষুধার্থ মানুষ জঠর জ্বালা সংবরণ করতে না পেয়ে সেগুলো গোগ্রাসে খেয়ে ফেলেছে। ১৯৭৪ সালের ২৮শে সেপ্টেম্বর তারিখে ইত্তেফাকের একটি খবরের শিরোনাম ছিলঃ “রাজধানীর পথে পথে জীবিত কংকাল।” উক্ত শিরোনামে ভিতরের বর্ননা ছিলঃ “শীর্নকায় কঙ্কালসার আদম সন্তান। মৃত না জীবিত বুঝিয়া ওঠা দুস্কর। পড়িয়া আছে রাজধানী ঢাকা নগরীর গলি হইতে রাজপথের এখানে সেখানে। হাড় জিরজিরে বক্ষে হাত রাখিয়াই কেবল অনুভব করা যায় ইহারা জীবিত না মৃত।”১৯৭৪ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ইত্তেফাক খবরের শিরোনাম দেয়,“ক্ষুধার্ত মানুষের আর্তচীৎকারে ঘুম ভাংগে”।খবরটি ছিল,“নিরন্ন, অভুক্ত,অর্ধভুক্ত,অর্ধনগ্ন ও কঙ্কালসার অসহায় মানুষের আহাজারি ও ক্ষুধার্ত শিশুর আর্তচীৎকারে এখন রাজধানীর সমস্যা পীড়িত মানুষের ঘুম ভাঙ্গে। অতি প্রত্যুষে হইতে গভীর রাত্রি পর্যন্ত দ্বারে দ্বারে করুণ আর্তিঃ “আম্মা! একখানা রুটি দ্যান। গৃহিনীর কখনো বিরক্ত হন,আবার কখনও আদম সন্তানের এহেন দুর্দশা দেখিয়া অশ্রুসজল হইয়া ওঠেন”। এ এক হৃদয়বিদারক চিত্র!বাংলাদেশের হাজারো বছরের ইতিহাসে বহু শাসক,বহু রাজা-বাদশাহ ক্ষমতায় বসেছে। সুলতানী আমল এসেছে,মোঘল আমল এসেছে,এসেছে ব্রিটিশ ও পাকিস্তান আমল। কিন্তু কোন আমলেও কি মানুষকে বেঁচে থাকার সংগ্রামে এতটা নীচে নামতে হয়েছে যা হয়েছে মুজিব আমলে? বাংলা এক কালে সোনার বাংলা রূপে পরিচিত ছিল। দেশটিতে এক সময় প্রচুর প্রাচুর্য ছিল। শেখ মুজিব পাকিস্তান আমলে প্রশ্ন তুলেছেন, “সোনার বাংলা শ্মশান কেন?”পাকিস্তানী শাসকবর্গ সোনার বাংলাকে শ্মশান করেছে -এ অভিযোগ এনে লাখো লাখো পোস্টার ছেপে ১৯৭০-এর নির্বাচন কালে দেশ জুড়ে বিতর করা হয়েছিল।আর এভাবে পরিকল্পিত ভাবে মানুষকে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ক্ষেপানো হয়েছিল। প্রশ্ন হল,পাকিস্তান আমলে অভাবের তাড়নায় কোন মহিলাকে কি মাছধরা ঝাল পড়তে হয়েছে? কাউকে কি ক্ষুধার তাড়নায় বমি খেতে হয়েছে? কাউকে কি নিজ সন্তান বিক্রি করতে হয়েছে? এরূপ কোন ঘটনা পাকিস্তান আমলে হয়নি। সে সময় দেশ শ্মশান ছিল না,বরং সে অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে খোদ মুজিবের শাসনামলে।এজন্যই মুজিবের মৃত্যূতে ঢাকায় শোক মিছল হয়নি।সেদিন কেউ কোন কালো ব্যাজও ধারণ করেনি।বরং তার নিজের দলের লোকেরা পর্যন্ত মুজিবের লাশ সিড়িঁর নীচে ফেলে মন্ত্রীত্বের শপথ নিয়েছেন।
 (C+P) Samu...........

টেলিপ্যাথি ! মনের জানালা.......।


আপনি আপনার নতুন বন্ধুর সঙ্গে গল্প করছেন। হুট করেই বন্ধুটি এমন কিছু কথা বলে বসলো যা কখনো আপনি তাকে জানাননি। কথাগুলো কিন্তু মিথ্যে নয়। এই কথাগুলো আপনার মনের ভেতর ছিল। কিন্তু আপনার বন্ধু সে কথা জানলো কী করে? মনের কথা জানা বা অনুমান করার এই অদ্ভুত ক্ষমতাকেই টেলিপ্যাথি বলে। পৃথিবীতে এমন কিছু মানুষ আছে যারা প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট। নিজেদের অদ্ভুত ক্ষমতাবলে বুঝে নিতে পারে পাশের মানুষটির মানসিক অবস্থা। বলে দিতে পারে তার না বলা কথা। আবার কেউ কেউ নিজের চিন্তা-ভাবনা মুহূর্তেই ঢুকিয়ে দিতে পারে অন্যের মনে। তারা দেখতে পারে মানুষের আত্মাও! এরকম বিষয় নিয়েই আলোচনা করে প্যারা সাইকোলজি।
এটি সাইকোলজির একটি মজার শাখা। এখানে মানুষের অদ্ভুত সব ক্ষমতা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। এমনই এক অদ্ভুত ক্ষমতা হলো টেলিপ্যাথি। টেলিপ্যাথি বলতে আসলে মানুষের অস্বাভাবিক বা অতি ইন্দ্রীয় যোগাযোগকে বুঝানো হয়। বলা চলে টেলিপ্যাথি হচ্ছে মানুষের মনের কথা বুঝতে পারা। এরকম বিষয়গুলো আলোচিত হয় প্যারা সাইকোলজিতে। জার্মান সাইকোলোজিস্ট ম্যাক্স দেসোর (১৮৬৭-১৯৪৭) সর্বপ্রথম সাইকোলজির এই শাখাটিকে সংজ্ঞায়িত করেন। আর ফ্রেডরিক ডবি্লউএস মেয়ার ১৮৮২ খ্রিস্টাব্দে প্রথমবারের মতো টেলিপ্যাথির সংজ্ঞায়ন করেন।
প্যারা সাইকোলজিতে অলৌকিক সব ঘটনা নিয়ে পর্যালোচনা করা হলেও এর সবই পুরোপুরি বিজ্ঞানসম্মত। মানুষের মনের কোন ভুল বা ভ্রান্ত ধারণাগুলো কখনোই প্যারা সাইকোলজির বিষয়ভুক্ত হয় না। প্যারা সাইকোলজিস্টরা কিছু বিষয় নিয়ে তাদের বিশ্লেষণ করে থাকেন, যার মধ্যে পড়ে টেলিপ্যাথি, প্রি-রিকগনিশন, টেলিকিনসিস বা সাইকোকিনসিস, সাইকোমেট্রি, মৃত্যুস্পর্শ, বাইলোকেশন প্রভৃতি।
আসলেই কি এমন কিছু মানুষ আছে যারা প্রকৃতির আশীর্বাদপুষ্ট, যারা সত্যিই অন্যের আত্মা দেখতে পারে; বলতে পারে অন্যের মনের কথা। কিংবা নিমিষেই বদলে দিতে পারে অন্যের চিন্তা? সত্যিই কী টেলিপ্যাথির কোন অস্তিত্ব আছে?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজে বের করা কঠিন নয়। কেননা খুব কাঠখোট্টা বিজ্ঞানীও টেলিপ্যাথিকে অবজ্ঞার চোখে দেখেন না। কিন্তু প্যারাসাইকোলজির অন্যগুলো এতোটা গুরুত্ব পায় না যতোটা পায় টেলিপ্যাথি। কারণ একটাই। ভালো মতো লক্ষ্য করলে দেখা যাবে আমরা আমাদের জীবনের কোনো না কোনো ক্ষেত্রে এরকম কিছু না কিছু ঘটনার প্রমাণ রয়েছে। যেমন ধরুন আপনি কোনো এক বন্ধুর কথা! গভীরভাবে চিন্তা করছেন, ঠিক সেই মুহূর্তে আপনার বন্ধুটি আপনার বাসায় এসে হাজির। এসব বিষয়কে সাধারণত আমরা কাকতালীয় ঘটনা বলে পাশ কাটিয়ে যাই। তবে সবই কাকতালীয় নয়। কারণ এটি আসলে আমাদের মস্তিষ্কের এক অতীন্দ্রিয় সংবেদনশীলতা, যেটি অসীম ক্ষমতার অধিকারী। কিন্তু আমরা চাইলেও সেখানে প্রবেশ করতে পারি না।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে অন্যদের মনোজগতে ভ্রমণ করতে পারে এমন লোকদের নিয়ে কিছু পরীক্ষা চালিয়েছিল তিন দ্য গ্রেট সোভিয়েত ইউনিয়ন, আমেরিকা এবং ব্রিটেন। মজার ব্যাপার হলো তার চমকপ্রদ ফলাফলও পাওয়া গিয়েছিল। সে সময় টেলিপ্যাথি মিলিটারি ইন্টিলিজেন্সে একটি বিশেষ আসন করে নিয়েছিল এবং এর ধারকদের বলা হতো ‘সাই এজেন্ট’। বর্তমানে বিজ্ঞানীরা টেলিপ্যাথিকে রিমোট সেন্সিং বলতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। সে যাই হোক, এই এজেন্টরা তাদের মনটাকে ব্যবহার করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গা এবং বস্তু সম্পর্কে তথ্য দিতেন।
সময়টা ১৯৪০ সাল, এরকমই এক ক্ষমতাধর টেলিপ্যাথ উলফ ম্যাসিং জোসেফ স্ট্যালিনের সুনজরে পড়লেন। উলফ ম্যাসিং এর মজার কিছু ঘটনা ছিল। যেগুলোতে তার অতি ইন্দ্রীয় ক্ষমতার অহরহ প্রমাণ ছিল।
এই প্রমাণগুলোকেই মূলত টেলিপ্যাথির প্রতি সরকারি আকর্ষণের সূত্রপাত ধরা হয়। পশ্চিমা বিশ্বও টেলিপ্যাথি নিয়ে নাড়াচাড়ায় পিছিয়ে ছিল না। ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৯ সালের মধ্যে এসজি সোয়াল (১৮৮৯-১৯৭৯) নামের ইউনিভার্সিটি অফ লন্ডনের এক গণিতের প্রফেসর ১ লাখ মানুষের মধ্য থেকে ১৬০ জনকে নিয়ে টেলিপ্যাথি টেস্ট করেন। একইভাবে প্যারাসাইকোলজিস্ট বাসিল সাকলেটন এবং রিটা এলিয়ট কিছু ফলাফল পেতে সক্ষম হন যেটাকে কোনোভাবেই কাকতালীয় বলে উড়িয়ে দেওয়া সম্ভব নয়।
তবে কেন একজন অন্যের মনোজগতে বিচরণ কিংবা চেতনাকে আচ্ছন্ন করতে পারছে, সে রহস্য আজো অজানা। অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা প্রত্যেক মানুষেরই একটা নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত এই ধরনের ক্ষমতা রয়েছে। আর এই ক্ষমতাটা কাজে লাগানোর জন্য সুতীক্ষ্ন মনোসংযোগ প্রয়োজন। টেলিপ্যাথি পরীক্ষার একটা সহজ প্যাটার্ন আছে। এ ক্ষেত্রে সাবজেক্ট এবং পরীক্ষক মুখোমুখি বসেন আর পরীক্ষকের সামনে থাকে একটা মনিটর যেখানে একটার পর একটা ছবি অথবা চিহ্ন উৎপন্ন হতে থাকে। পরীক্ষকের সামনে যে ছবি প্রদর্শিত হচ্ছে টেলিপ্যাথকে (সাবজেক্ট) সেটা বলতে বা এঁকে দেখাতে হয়। টেলিপ্যাথ পরীক্ষকের মস্তিষ্কের ইমেজটা পড়তে পারে এবং তার ওপর ভিত্তি করেই ছবি আঁকে। বছরের পর বছর এই পদ্ধতিতে আশ্চর্যজনক ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে।
ব্রিটিশ জীববিজ্ঞানী রুপার্ট শেল্ডরেক এই মরফোজেনাটিক ফিল্ডের সূত্র আবিষ্কার করেন। এই সূত্রানুযায়ী প্রকৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই কিছু তথ্য সংরক্ষণ করে রাখে, যা পরবর্তী প্রয়োজনানুসারে অন্যদের কাছে পৌঁছে যায়। তার বিখ্যাত উদাহরণগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে, ব্রিটিশ বংশীয় চিকাডি নামক পাখির দুধ চুরির কৌশল। তার ভাষ্য অনুযায়ী কিছু পাখি যখন দুধের বোতলের অ্যালুমিনিয়ামের ঢাকনা খুলে দুধ চুরি করা শিখেছিল সেই কৌশলটি বিস্তৃত এলাকাজুড়ে ঐ প্রজাতির পাখিদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল। শুধু তাই নয়, খুব দ্রুত ইউরোপ মহাদেশীয় অন্যান্য পাখিও একই কৌশলে দুধ চুরি করা শুরু করে দেয়। এটা সম্ভব হয়েছিল মরফোজেনেটিক ফিল্ডের বদৌলতে, কারণ টেলিপ্যাথি বাঁধনহীন, এটা মানুষ এবং পশু উভয়ের সঙ্গেই সমানভাবে সংযোগ স্থাপন করতে পারে।
শেল্ডরেক এই ব্যাপারটি প্রমাণ করার জন্য বেছে নিয়েছিল একটা পোষা তোতা পাখি এবং এর মালিককে। তোতা পাখিটির ভাণ্ডারে ছিল ৫০০ শব্দ এবং এই শব্দগুলোর সমন্বয়ে পাখিটি যে কোনো বাক্য বলতে পারত। এই পাখিটাকে একটা মনিটরের সামনে রাখা হলো যেখানে তার মালিক এ্যামিকে দেখা যাচ্ছিল। পাখিটির মালিক ছিল একই বিল্ডিংয়ের আরেক ফ্লোরে (পাখিটির থেকে দুই ফ্লোর নিচে)। এ্যামির সামনে ছিল কিছু খাম, যার মধ্যে ছিল কিছু ছবি এবং সিম্বল। এ্যামি খাম খুলে ছবিগুলো দেখা শুরু করল। আশ্চর্যজনকভাবে তোতা পাখিটি তার মালিকের ভিডিও ইমেজ দেখে ইংরেজিতে সেই ছবিগুলোর বর্ণনা দিতে শুরু করল, যেন সে তার মালিকের মনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে ফেলেছে। পশু-মানুষের মধ্যে এমন নিরবচ্ছিন্ন এবং চমকপ্রদ টেলিপ্যাথিক দৃষ্টান্ত আজ পর্যন্ত আর দেখা যায়নি।
এটা ছাড়াও বিবিসি মানুষ এবং পশুর ওপর পরীক্ষার কিছু নমুনা নিয়ে ডকুমেন্টারি করেছে। অসংখ্যবার টেলিপ্যাথির এই পরীক্ষা চালানো হয়েছে এবং একই ফলাফল পাওয়া গেছে। কাজেই এটি কাকতালীয় কোনো ঘটনা হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই মানুষের মতো পশু-পাখিদের মধ্যেও দারুনভাবে কাজ করে টেলিপ্যাথি।
সত্যিকার অর্থে টেলিপ্যাথি ঠিক কিভাবে কাজ করে সেটি এখনো ধোঁয়াশা। হয়তো একদিন সে রহস্যের দ্বার উন্মোচিত হবে। এরপরও প্রশ্ন থেকেই যাবে এই অদ্ভুত ক্ষমতার মূল রহস্যটা আসলে কোথায়। কেন এই ক্ষমতাটা বিদ্যমান। আর যদিও বিদ্যমান, কেনই বা অল্প ক’জনই এটার প্রয়োগ করতে পারে!
(C+P).......

Friday 25 March 2011

বলিঊডের প্রখ্যাত সংগিত পরিচালক প্রিতম চক্রবতি চুরিবিদ্যায় যে অতুলোনিয়।


প্রিতম চক্রবতীর কপি করা গান

আপনি হয়তো জানেন যে বলিঊডের প্রখ্যাত সংগিত পরিচালক প্রিতম চক্রবতি খুব গুনি একজন মানুষ। বর্তমানের হিন্দি গানগুলোতে যেন তার নাম ছাড়া চলছে না। হ্যা ঠিক তাই সে গানে কতোটাগুনি তা বলতে পারবোনা কিন্তু চুরিবিদ্যায় সে অতুলোনিয়। 
যেমন এই গানটা একবার শুনে দেখতে পারেন।রেস ফিল্মের পেহলি নাজার মে- আতিফ আসলামডাউনলোড
আর এটার আসল গানটা। ডাউনলোড।
 তার চুরি করা গানের লিস্টঃ


2004:
1. Shikdum (from movie Dhoom)
Original source: Turkish singer Tarkan’s ‘Sikidim
2.Dhoom machale Dhoom (from movie Dhoom)
Original source: Fusion of two songs Jesse Cook’s ‘Mario takes a walk’ and Egyptian singer Amr Diab’s Enta Ma Oltesh Leh
3.Janm Bhoomi pe jaan lutate hain (From movie Agnipankh)
Original source: Abrar-ul-haq’s ‘December’
2005:
1. Zahreeli raatein (Chocolate)
Original source: ‘Aadat’ from Jal
2.Bheega bheega sa ye (Chocolate)
Original source: Abrar-ul-haq’s ‘December’
3.Halka halka sa ye nasha (Chocolate)
Original source: Jesse Cook’s ‘Breeze from Saintes Maries
4.Dil samundar (Garam Masala)
Original source: Turkish singer Tarkan’s ‘Kuzu kuzu’
5.Chori Chori dil le gaya (Garam masala)
Original source: Dr Zeus/ Balwinder Safri’s ‘Hai rabba’
6. Ada janlewa ada (Garam masala)
Original source: Amr Diab’s ‘Ana’
7.Falak dekhoon (Gram masala)
Original source: Fusion of two songs Amr Diab’s Wala Ala Balo (prelude) & Sadda’ny Khalas (main tune)
8. Jhoom (Ek khiladi ek haseena)
Original source: Britney Spears’ commercial for Pepsi, ‘Joy of Pepsi’
9. Akhiyaan Na Maar mere yaar (Ek khiladi ek haseena)
Original source: Waris Baig’s ‘Challa’
10. Jal Jal Ke (Ek khiladi ek haseena)
Original source: Yuri Mrakadi’s ‘Arabiyon Ana’
2006:
1. Chhoren ki baatein (Fight Club)
Original source: Ali Zafar’s ‘Channo ki aankhen
2. Joshilay jawan ho (Fight Club)
Original source: Egyptian singer Ihab (Ehab) Tawfik’s ‘Allah alek ya siedi’
3. Bheegi bheegi (Gangster)
Original source: Mohiner Ghoraguli’s ‘Prithibi’
4. Lamha lamha (Gangster)
Original source: Waris Baig’s ‘Kal shab dekha maine’
5.Tu hi meri shab hai subah hai (Gangster)
Original source: Oliver Shanti & Friends ‘Sacral Nirvana’
6.Ya ali (Gangster)
Original source: Guitara’s ‘Ya ghaly’
7.Ankahee (Ankahee)
Original source: Boney M’s ‘Somewhere in the world
8.Is this love (Pyar ke side effects)
Original source: Paul Anka’s ‘A-mi-manera’
9. Kya mujhe pyar hai (Wo lamhe)
Original source: Indonesian band Peterpan’s ‘Tak bisakah’
10.Hai ishq (Bas ek pal)
Original source: Yuri Mrakadi’s ‘Arabiyon Ana’
11.Tu jo Nahin hai to (Wo lamhe)
Original source: Sunny Benjamin John’s (SB John) ‘Tu jo Nahin hai to’
12.Dil mein baje guitar (Apna sapna money money)
Original source: Middle Eastern group, Miami Band’s ‘Sheloha shela
13.Aa paas aa (Ankahee)
Original source: Ottmar Liebert’s ‘Starry nite’
14.Signal pyar ka signal (Bhagam Bhag)
Original source: Trinidadian Soca’s ‘Signal for Lara’
15.Afreen (Bhagam Bhag)
Original source: Cheb Mami’s ‘Viens Habibi’
16. Jaane kya (Pyar ke side effects)
Original source: Hadiqa Kiyani’s ‘Mahi’
17.Chal chale (Wo Lamhe)
Original source: From bandThe Seekers ‘A World of our own’
2007:
1. Jaane kaise (Raqeeb)
Original source: Amr Diab’s ‘Allem albi’
2. Channa ve channa (Raqeeb)
Original source: Rahim Shah Channa ve
3. In dino (Metro)
Original source: Waqar Ali’s ‘Mera naam hai mohobbat’
4.Oh meri jaan (Metro)
Original source: Amr Diab’s ‘Ba’ed el Layali’
5. Tikhi tikhi (Speed)
Original source: Tarkan’s ‘Dudu’
6.Hare ram hare ram (Bhool bhulaiya)
Original source: Bill Hailey’s ‘My lecon’
7.Baatein kuch ankahee si (Life in a Metro)
Original source: Korean song, ‘Ah Reum Dah Oon Sa Ram’ by Seo Yu Seok’
8.Aao milo chale (Jab we met)
Original source: Peterpan’s ‘Di Belakangku’
9. Yeh ishq hai (Jab we met)
Original source: Anggun’s ‘Être Une Femme’
2008:
1.Pehli Nazar mein kaisa (Race)
Original source: Kim Hyung-sub’s ‘Sarang hae yo’
2.Zara zara (Race)
Original source: Lee-Hom Wang’s ‘Deep within the Bamboo grove’
3.Haanji (Kidnap)
Original source: Sukshinder Shinda’s ‘Punjabi Clap’
2009:
1.Hai junoon (New York)
Original source: Indonesian band Samsons’ song, ‘Naluri Lelaki’
2.Haughty Naughty (De dana dhan)
Original source: Haryanvi song, ‘Hat ja tau’ by singer Vijay Dahiya
(C+P)...........

Sunday 20 March 2011

নিজের চোখকে আপনি নিজেই বিশ্বাস করবেনা !!!!!


আপনি যা দেখছেন তা কিন্তু সত্য নয় !!!!!


ছবিতে কয়টি কাল বিন্দু আছে গুনে বলুনতো ?

 
স্ক্রীনের খুব কাছ থেকে একনজরে যোগ চিহ্নের দিকে তাকিয়ে থাকুন, বলেনতো বৃত্তগুলো কোথায় গেল ?


বলেনতো বর্গগুলো কি ঠিক হয়েছে ?


ছোট ঘনকটি বড় ঘনকের ভিতরে না বাইরে ?


ছবিতে কয়টি শেলফ আছে ?


সবচেয়ে নিচের ধাপ কোনটি ?


বলেনতো লাল রেখা দুটি কি সমান্তরাল ?

 
ছবিতে কি লেখা আছে ?

Thursday 10 March 2011

ইসলামে আর্থিক সুবিধা পুত্রের চেয়ে কন্যার বেশি

পত্রপত্রিকার খবরে দেখা যাচ্ছে, সদ্য প্রস্তাবিত নারী উন্নয়ন নীতিতে সরকার উত্তরাধিকারের ক্ষেত্রে নারী ও পুরুষকে সমান করতে চাচ্ছে। তা করা হলে কুরআনের সূরা নিসার আয়াত নম্বর ১১-এর নির্দেশিত বিধানের সরাসরি লঙ্ঘন করা হবে। অথচ এটি একেবারেই অপ্রয়োজনীয়। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে পুত্রের চেয়ে কন্যার আর্থিক অধিকার এবং সুবিধা বেশি। নিচের বিশ্লেষণই তা প্রমাণ করবে।

আমার নিজের কথাই বলি। আমরা অনেক ভাই-বোন ছিলাম। আমার মরহুম আব্বার সমগ্র সম্পত্তির মূল্য আজকের বাজারদরে প্রায় ৯০ লাখ টাকা হবে। আমরা প্রত্যেক ভাই ১৫ লাখ টাকার উত্তরাধিকারী হয়েছিলাম এবং প্রত্যেক বোন সাড়ে সাত লাখ টাকার উত্তরাধিকারী হয়েছিল। অর্থাৎ আমার সুবিধা বোনের তুলনায় ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বেশি ছিল। অন্য দিকে ইসলামি বিধান মোতাবেক (কুরআনে সূরা বাকারা, সূরা নিসা ও সূরা তালাক) আমাকে আমার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার ভরণপোষণ ব্যয় বহন করতে হয়েছে। আজকের মূল্যে তা অন্তত ৩০ হাজার টাকা মাসিক খরচ হবে। আমার স্ত্রী ৩০ বছর বিবাহিত জীবনের পর মারা যান। এ সময় আমাকে প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা করে ৩০ বছর ধরে ব্যয় করতে হয়েছিল, যার পরিমাণ (৩০,০০০কô১২কô৩০) এক কোটি আট লাখ টাকা।

এর পরও পিতা হিসেবে আমার কন্যার জন্য আমাকে অনেক খরচ করতে হয়। অন্য দিকে আমার বোনকে কোনো অর্থ ব্যয় করতে হয়নি বোনের স্বামী, পুত্র বা কন্যার ভরণপোষণের জন্য। কেননা কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক তারা এর জন্য দায়িত্বশীল নয়। অর্থাৎ ভরণপোষণের ক্ষেত্রে যেখানে আমাকে এক কোটি আট লাখ টাকা ব্যয় করতে হয়েছে, সেখানে এ পরিমাণ অর্থ আমার বোনকে ব্যয় করতে হয়নি। এ ক্ষেত্রে বোনের সুবিধা এক কোটি আট লাখ টাকা। যদি আমার সাড়ে সাত লাখ টাকা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অধিক সুবিধা বাদ দেয়া হয় তাহলে বোনের নিট সুবিধা হয় (১,০৮,০০,০০০-৭,৫০,০০০=১,০০,৫০,০০০/-) এক কোটি পঞ্চাশ হাজার টাকা। এ হিসাবে আমি মোহরানা ধরিনি। অসংখ্য ক্ষেত্রে হিসাব করে দেখেছি, সার্বিক আর্থিক সুবিধা ইসলামি বিধানে পুত্রের চেয়ে কন্যার বেশি।

পিতামাতার উত্তরাধিকার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সমান। ভাইবোনরা, যে ক্ষেত্রে তারা উত্তরাধিকারী হয়ে থাকেন, বেশ কিছু ক্ষেত্রে সমান পান। এসব ক্ষেত্রেও সব শ্রেণীর পুরুষের আর্থিক দায়িত্ব নারীর চেয়ে একইভাবে বেশি।

হিসাব করে দেখেছি, আমেরিকার জনগণ যদি ইসলামি আইন অনুসরণ করে, তাহলে নারীরাই অধিক সুবিধা পাবে। সেখানে উত্তরাধিকার খুব সামান্যই পাওয়া যায়। কেননা বেশির ভাগ মানুষ ক্রেডিট কার্ডে চলে, তাদের সঞ্চয় নেই বা থাকলেও তা খুবই সামান্য ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে। সে দেশে মাসিক খরচ যদি মাত্র দুই হাজার ডলারও ধরি তাহলে ৩০ বছরের বিবাহিত জীবনে ইসলামি আইন মোতাবেক নারীর সুবিধা হবে (২০০০কô১২কô৩০) ৭,২০,০০০ ডলার (বাংলাদেশী টাকায় ৭,২০,০০০কô৭০=৫,০৪,০০,০০০/- (পাঁচ কোটি চার লাখ টাকা)।

এ আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে আশা করি এ কথা স্পষ্ট হয়েছে যে, পুরুষ ও নারীর আর্থিক সুবিধা প্রদানের ক্ষেত্রে ইসলাম মূলত নারীদের অধিক সুবিধা দিয়েছে। তাই উত্তরাধিকার আইন বদলের যেকোনো প্রচেষ্টা অপ্রয়োজনীয়। তদুপরি ৯০ ভাগ মুসলিম অধিবাসীর বাংলাদেশে এ ধরনের সরাসরি কুরআন-বিরোধী বিধান প্রবর্তন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। দেশে উত্তেজনা সৃষ্টি হবে। আমি সরকারকে অনুরোধ করি, যেন তারা এ উদ্যোগ থেকে সরে আসেন। নারীদের সব ধরনের অধিকার দেয়া হোক, তাদের অধিকার যাতে তারা সত্যিকার অর্থেই পায় এবং কেবল কথায় যাতে তা সীমাবদ্ধ না থাকে, তার জন্য ব্যবস্খা নিন। কিন্তু সরাসরি কুরআন ও ধর্মের সাথে সংঘর্ষশীল ব্যবস্খা নেবেন না। এসব বিধান ভালো করে কার্যকরও হয় না। যেসব আইনের পেছনে নৈতিকতার সমর্থন রয়েছে, ধর্মের সমর্থন রয়েছে, সেগুলো বেশি কার্যকর হয়। ধর্মবিরোধী আইন কখনোই সত্যিকার অর্থে কার্যকর হয় না। কেননা আইনের পেছনে দরকার নৈতিক ভিত্তি।



লেখক : শাহ আব্দুল হান্নান
সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার 

*.*.*.*

ইসলামের উত্তরাধিকার আইন সম্পর্কে বিভ্রান্তি দূর করার প্রচেষ্টা সম্পদে বোনের অধিকার ভাইয়ের অর্ধেক

আমাদের আজকের লেখায় ইসলামী উত্তারাধিকার আইনের বর্ণনা দেয়া উদ্দেশ্য নয়। এনিয়ে ইসলামীআইনবিদদের লেখা শত শত ভলিউম লেখা আছে । যে কেউ সেগুলো পড়তে পারেন। বরং, আমাদের আজকের লেখার শুরুতে বলব, এই আইনগুলো কে, কেন দিয়েছেন তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা। এগুলো মানলে কি লাভ ও না মানলে কি ক্ষতি হবে তাও উল্লেখ করব। পরিশেষে আমরা এই আইনগুলো প্রয়োগের সময় রাসুলুল্লাহ সা: ও সাহাবীদের রা: কর্তৃক গৃহিত কিছু মৌলিক দিকনির্দেশনা এবং বাস্তবের বিভিন্ন সমস্যায় কি ভাবে আল-কোরআনের নিয়মাবলী প্রয়োগ করা হয়েছে সেগুলোর কিছু উদাহরণ উল্লেখ করব। ইনশাল্লাহ।

► ইসলামী উত্তারাধিকার আইন : সুরা নিসা◄

→ নিসা ৭ : পিতা-মাতা ও আত্নীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে পুরুষদেরও অংশ আছে এবং পিতা-মাতা ও আত্মীয়-স্বজনদের পরিত্যক্ত সম্পত্তিতে নারীদেরও অংশ আছে; অল্প হোক কিংবা বেশী। এ অংশ (আল্লাহর পক্ষ থেকে) নির্ধারিত।


আয়াতে সুস্পষ্টভাবে পাঁচটি আইনগত নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এক, মীরাস কেবল পুরুষদের নয়, মেয়েদেরও অধিকার।

দুই, যত কমই হোক না কেন মীরাস অবশ্যি বন্টিত হতে হবে। এমন কি মৃত ব্যক্তি যদি এক গজ কাপড় রেখে গিয়ে থাকে এবং তার দশজন ওয়ারিস থাকে, তাহলেও তা ওয়ারিসদের মধ্যে ভাগ করে দিতে হবে। একজন ওয়ারিস অন্যজনের থেকে যদি তার অংশ কিনে নেয় তাহলে তা আলাদা কথা।

তিন, এ আয়াত থেকে একথাও সুস্পষ্ট হয়েছে যে, মীরাসের বিধান স্থাবর-অস্থাবর, কৃষি-শিল্প বা অন্য যে কোন ধরনের সম্পত্তি হোক না কেন সব ক্ষেত্রে জারী হবে।

চার, এ থেকে জানা যায় যে, মীরাসের অধিকার তখনই সৃষ্টি হয় যখন মৃত ব্যক্তি কোন সম্পদ রেখে মারা যায়।

পাঁচ, এ থেকে এ বিধানও নির্দিষ্ট হয় যে, নিকটতম আত্মীয়ের উপস্থিতিতে দূরতম আত্মীয় মীরাস লাভ করবে না।

→ নিসা ৮ : সম্পত্তি বন্টনের সময় যখন আত্নীয়-স্বজন, এতীম ও মিসকীন উপস্খিত হয়, তখন তা থেকে তাদের কিছু দিয়ে দাও এবং তাদের সাথে কিছু সদালাপ করো।

এখানে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদেরকে সম্বোধন করা হয়েছে। তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছেঃ মীরাস বন্টনের সময় নিকট ও দূরের আত্মীয়রা, নিজের গোত্রের ও পরিবারের গরীব মিসিকন লোকরা এবং এতিম ছেলেমেয়ে যারা সেখানে উপস্থিত থাকে, তাদের সাথে হৃদয়হীন ব্যবহার করো না। শরীয়াতের বিধান মতে মীরাসে তাদের অংশ নেই ঠিকই কিন্তু একটু ঔদার্যের পরিচয় দিয়ে পরিত্যক্ত সম্পত্তি থেকে তাদেরকেও কিছু দিয়ে দাও। সাধারণভাবে এহেন অবস্থায় সংকীর্ণমনা লোকরা যে ধরনের হৃদয়বিদারক আচরণ করে ও নির্মম কথাবার্তা বলে,তাদের সাথে তেমনটি করো না।

→ নিসা ৯ : লোকদের একথা মনে করে ভয় করা উচিত যে, তারা যদি মরার সময় নিজেদের পশ্চাতে দুর্বল অক্ষম সন্তান-সন্ততি ছেড়ে যেত তাহলে তাদের জন্যে তারা কতই না আশঙ্কা করত। সুতরাং তারা যেন আল্লাহকে ভয় করে এবং ন্যায় সংগত কথা বলে।

→ *নিসা ১১ :

তোমাদের সন্তানদের ব্যাপারে আল্লাহ তোমাদের নির্দেশ দিচ্ছেনঃ পুরুষদের অংশ দুজন মেয়ের সমান।

মীরাসের ব্যাপারে এটি প্রথম ও প্রধান মৌলিক বিধান যে, পুরুষদের অংশ হবে মেয়েদের দ্বিগুণ। যেহেতু পারিবারিক জীবন ক্ষেত্রে শরীয়াত পুরুষদের ওপর অর্থনেতিক দায়িত্বের বোঝা বেশী করে চাপিয়ে এবং অনেকগুলো অর্থনৈতিক দায়িত্ব থেকে মেয়েদেরকে মুক্তি দিয়েছে,তাই মীরাসের ব্যাপারে মেয়েদের অংশ পুরুষদের তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম রাখা হবে, এটিই ছিল ইনসাফের দাবী।

যদি (মৃতের ওয়ারিস) দুয়ের বেশী মেয়ে হয়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দুভাগ তাদের দাও।

দু’টি মেয়ের ব্যাপারেও এই একই বিধান কার্যকর। অর্থাৎ কোন ব্যক্তির যদি কোন পুত্রসন্তান না থাকে এবং সবগুলোই থাকে কন্যা সন্তান, কন্যাদের সংখ্যা দুই বা দু’য়ের বেশী হোক না কেন, তারা সমগ্র পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ পাবে। অবশিষ্ট তিনভাগের একভাগ অন্যান্য ওয়ারিসদের মধ্য বন্টন করা হবে। কিন্তু যদি মৃত ব্যক্তির শুধুমাত্র একটি পুত্র থাকে, তাহলে এ ব্যাপারে ইজমা অনুষ্ঠিত হয়েছে অর্থাৎ ফিকাহবিদগণ সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, অন্যান্য ওয়ারিসদের অনুপস্থিতিতে সে-ই সমস্ত সম্পত্তির ওয়ারিস হবে। আর যদি অন্যান্য ওয়ারিসরাও থাকে, তাহলে তাদের অংশ দিয়ে দেবার পর বাকি সমস্ত সম্পত্তিই সে পাবে।

আর যদি একটি মেয়ে ওয়ারিস হয়, তাহলে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেক তার। যদি মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকে , তাহলে তার বাপ-মা প্রত্যেকে সম্পত্তির ছয় ভাগের একভাগ পাবে।

অর্থাৎ মৃত ব্যক্তির সন্তান থাকলে তার বাপ-মা প্রত্যেকে ছয়ভাগের একভাগ পাবে। আর সন্তান যদি সবগুলোই হয় কন্যা বা সবগুলোই পুত্র অথবা পুত্র কন্যা উভয়ই হয় বা একটি পুত্র অথবা একটি কন্যা হয়, তাহলে বাকি তিনভাগের দু’ভাগে এ ওয়ারিসরা শরীক হবে।

আর যদি তার সন্তান না থাকে এবং বাপ-মা তার ওয়ারিস হয়, তাহলে মাকে তিন ভাগের একভাগ দিতে হবে ।

বাপ-মা ছাড়া যদি আর কেই ওয়ারিস না থাকে তাহলে বাকি তিনভাগের দু’ভাগ বাপ পাবে। অন্যথায় তিনভাগের দু’ভাগে বাপ ও অন্যান্য ওয়ারিসরা শরীক হবে।

যদি মৃতের ভাই-বোনও থাকে, তাহলে মা ছয় ভাগের একভাগ পাবে।

ভাই-বোন থাকলে মায়ের অংশ তিনভাগের এক ভাগের পরিবর্তে ছয় ভাগের একভাগ করে দেয়া হয়েছে। এভাবে মায়ের অংশ থেকে যে ছয় ভাগের এক ভাগ বের করে নেয়া হয়েছে তা বাপের অংশে দেয়া হবে। কেননা এ অবস্থায় বাপের দায়িত্ব বেড়ে যায়। মনে রাখতে হবে, মৃতের বাপ-মা জীবিত থাকলে তার ভাই-বোনরা কোন অংশ পাবে না।

(এ সমস্ত অংশ বের করতে হবে) মৃত ব্যক্তি যে অসিয়ত করে গেছে তা পূর্ণ করার এবং এ যে ঋণ রেখে গেছে তা আদায় করার পর। 

অসিয়তের বিষয়টি ঋণের আগে উল্লেখ করার কারণ হচ্ছে এই যে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য ঋণ রেখে মারা যাওয়া কোন জরুরী বিষয় নয়। কিন্তু মৃত্যুর পূর্বে অসিয়ত করা তার জন্য একান্ত জরুরী। তবে বিধানের গুরুত্বের দিক দিয়ে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, ঋণের স্থান অসিয়তের চাইতে অগ্রবর্তী। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি ঋণ রেখে মারা যায়, তাহলে সর্বপ্রথম তার পরিত্যাক্ত সম্পত্তি থেকে তা আদায় করা হবে, তারপর অসিয়ত পূর্ণ করা হবে এবং সবশেষে মীরাস বন্টন করা হবে। অসিয়ত সম্পর্কে সূরা বাকারার ১৮২ টীকায় আমি বলেছি, কোন ব্যক্তি তার সমগ্র সম্পত্তির তিন ভাগের এক ভাগ পর্যন্ত অসিয়ত করতে পার। অসিয়তের এই নিয়ম প্রবর্তনের কারণ হচ্ছে এই যে, মীরাসী আইনের মাধ্যমে যেসব আত্মীয়-স্বজন পরিত্যক্ত সম্পত্তির কোন অংশ পায় না, এখান থেকে তাদের যাকে যে পরিমাণ সাহায্য দেবার প্রয়োজন উপলদ্ধি করা হয়, তা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যেমন কোন এতিম নাতি বা নাতনী রয়েছে। মৃত পুত্রের কোন বিধবা স্ত্রী কষ্টে জীবন যাপন করছে। অথবা কোন ভাই, বোন, ভাবী, ভাই-পো, ভাগিনে বা কোন আত্মীয় সাহায্য-সহায়তা লাভের মুখাপেক্ষী। এ ক্ষেত্রে অসিয়তের মাধ্যমে তাদের অন্য হকদারদের জন্য বা কোন জনকল্যাণমূলক কাজে সম্পত্তির অংশ অসিয়ত করা যেত পারে। সারকথা হচ্ছে এই যে, সম্পদ-সম্পত্তির তিন ভাগের দু’ভাগ বা তার চাইতে কিছু বেশী অংশের ওপর ইসলামী শরীয়াত মীরাসের আইন বলবৎ করেছে। শরীয়াতের মনোনীত ওয়ারিসদের মধ্যে তা বন্টন করা হবে। আর তিন ভাগের এক ভাগ বা তার চেয়ে কিছু কম অংশের বন্টনের দায়িত্বভার নিজের ওপর ছেড়ে দিয়েছে। নিজের বিশেষ পারিবারিক অবস্থার প্রেক্ষিতে (যা বিভিন্ন ব্যক্তির ক্ষেত্রে বিভিন্ন হয়ে থাকে) সে যেভাবে সংগত মনে করবে বন্টন করার জন্য অসিয়ত করে যাবে। তারপর কোন ব্যক্তি যদি তার অসিয়তে জুলুম করে অথবা অন্য কথায় নিজের ইখতিয়ারকে এমন ত্রুটিপূর্ণভাবে ব্যবহার করে যার ফলে কারো বৈধ অধিকার প্রভাবিত হয়, তাহলে এর মীমাংসার দায়িত্ব পরিবারের লোকদের ওপর অর্পণ করা হয়েছে। তারা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এ ত্রুটি সংশোধন করে নেবে অথবা ইসলামী আদালতের কাযীর কাছে এ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করার আবেদন জানাবে এবং তিনি অসিয়তের ত্রুটি দূর করে দেবেন।

তোমরা জানো না তোমাদের বাপ-মা ও তোমাদের সন্তানদের মধ্যে উপকারের দিক দিয়ে কে তোমাদের বেশী নিকটবর্তী । এসব অংশ আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন । আর আল্লাহ অবশ্যি সকল সত্য জানেন এবং সকল কল্যাণময় ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত আছেন।

মীরাসে আল্লাহ প্রদত্ত আইনের গভীর তত্ত্ব উপলব্ধি করতে যারা সক্ষম নয়, এ ব্যাপারে যাদের জ্ঞান অজ্ঞতার পর্যায়ভুক্ত এবং যারা নিজেদের অপরিপক্ক বুদ্ধির সাহায্যে (তাদের জ্ঞান অনুযায়ী) আল্লাহর এই আইনের ত্রুটি দূর করতে চায়,তাদেরকে এ জবাব দেয়া হয়েছে।

→ নিসা ১২ :

তোমাদের স্ত্রীরা যদি নিঃসন্তান হয়, তাহলে তারা যা কিছু ছেড়ে যায় তার অর্ধেক তোমরা পাবে। অন্যথায় তাদের সন্তান থাকলে যে অসিয়ত তারা করো গেছে তা পূর্ণ করার এবং যে ঋণ তারা রেখে গেছে তা আদায় করার পর পরিত্যক্ত সম্পত্তির চার ভাগের এক ভাগ পাবে। অন্যথায় তোমাদের সন্তান থাকলে তোমাদের অসিয়ত পূর্ণ করার ও তোমাদের রেখে যাওয়া ঋণ আদায় করার পর তারা সম্পত্তির আট ভাগের একভাগ পাবে।

অর্থাৎ একজন স্ত্রী হোক বা একাধিক তাদের যদি সন্তান থাকে তাহলে তারা আট ভাগের একভাগ এবং সন্তান না থাকলে চার ভাগের এক ভাগ পাবে। আর এ চার ভাগের এক ভাগ বা আট ভাগের একভাগ সকল স্ত্রীর মধ্যে সমানভাবে বন্টিত হবে।

আর যদি পুরুষ বা স্ত্রীলোকের ( যার মীরাস বন্টন হবে) সন্তান না থাকে এবং বাপ-মাও জীবিত না থাকে কিন্তু এক ভাই বা এক বোন থাকে, তাহলে ভাই ও বোন প্রত্যেকেই ছয় ভাগের এক ভাগ পাবে। তবে ভাই-বোন একজনের বেশী হলে সমগ্র পরিত্যক্ত সম্পত্তির তিন ভাগের একভাগে তারা সবাই শরীক হবে,

অবশিষ্ট ছয় ভাগের পাঁচ ভাগ বা তিন ভাগের দু’ভাগ থেকে অন্য কোন ওয়ারিস থাকলে তার অংশ পাবে। অন্যথায় অবশিষ্ট ঐ সমস্ত সম্পত্তি ঐ ব্যক্তি অসিয়ত করতে পারবে। এ আয়াতের ব্যাপারে মুফাস্‌সিরগণের ‘ইজমা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে যে, এখানে মা-শরীক ভাই-বোনর কথা বলা হয়েছে। অর্থাৎ মৃতের সাথে তার আত্মীয়তা কেবলমাত্র মায়ের দিক থেকে এবং তাদের বাপ আলাদা। আর সহোদর এবং বৈমাত্রের ভাই-বোনের ব্যাপারে, মৃতের সাথে বাপের দিক থেকে যাদের আত্মীয়তা, তাদের সম্পর্কিত বিধান এ সূরার শেষের দিকে বিবৃত হয়েছে।

যে অসিয়ত করা হয়েছে তা পূর্ণ করার এবং যে ঋণ মৃত ব্যক্তি রেখে গেছে তা আদায় করার পর যদি তা ক্ষতিকর না হয় ।

অসিয়ত যদি এমনভাবে করা হয় যে,তার মাধ্যমে হকদার আত্মীয়দের হক নষ্ট হয়, তাহলে এ ধরনের অসিয়ত হয় ক্ষতিকর। আর নিছক হকদারদেরকে বঞ্চিত করার উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তি যখন অনর্থক নিজের ওপর এমন কোন ঋণের স্বীকৃতি দেয়, যা সে প্রকৃতপক্ষে নেয়নি, অথবা হকদারকে মীরাস থেকে বঞ্চিত করার লক্ষ্যে এমনি কোন কূটচাল চালে, সে ক্ষেত্রে এ ধরনের ঋণও ক্ষতিকর হয়ে দাঁড়ায়। এ ধরনের ক্ষতিকারক বিষয়কে কবীরা গোনাহ গণ্য করা হয়েছে। তাই হাদীসে বলা হয়েছে, অসিয়তের ক্ষেত্রে অন্যকে ক্ষতি করার প্রবণতা বড় গোনাহের অন্তরভূক্ত। অন্য একটি হাদীসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, মানুষ তার সারা জীবন জান্নাতবাসীদের মতো কাজ করতে থাকে কিন্তু মারার সময় অসিয়তের ক্ষেত্রে অন্যের ক্ষতি করার ব্যবস্থা করে নিজের জীবনের আমলনামাকে এমন কাজের মাধ্যমে শেষ করে যায়, যা তাকে জাহান্নামের অধিকারী করে দেয়। এ ক্ষতি করার প্রবণতা ও অন্যের অধিকার হরণ যদিও সর্বাবস্থায় গোনাহ তবুও ‘কালালাহ’-এর (যে নিসন্তান ব্যক্তির বাপ-মাও জীবিত নেই) ব্যাপারে মহান আল্লাহ বিশেষ করে এর উল্লেখ এ জন্য করেছেন যে, যে ব্যক্তির সন্তানাদি নেই আবার বাপ-মাও জীবিত নেই, তার মধ্যে সাধারণত নিজের সম্পদ-সম্পত্তি নষ্ট করার প্রবণতা কোন না কোনভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠে এবং সে দূরবর্তী আত্মীয়দেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার প্রচেষ্টা চালায়।

এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ, আর আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্বদর্শী ও সহিষ্ণু।

আল্লাহর জ্ঞানের কথা উচ্চারণ করার পেছনে এখানে দু’টি কারণ রয়েছে। এক, যদি এ আইন ও বিধানের বিরুদ্ধাচরণ করা হয় তাহলে মানুষ আল্লাহর পাকড়াও থেকে বাঁচতে পারবে না। দুই, আল্লাহ যে অংশ যেভাবে নির্ধারণ করেছেন তা একেবারেই নির্ভুল। কারণ যে বিষয়ে মানুষের কল্যাণ ও সুবিধা তা মানুষের চেয়ে আল্লাহ ভালো জানেন। এই সংগে আল্লাহর ধৈয্য ও সহিষ্ণুতা গুনের কথা বলার কারণ হচ্ছে এই যে, এ আইন প্রবর্তনের ব্যাপারে আল্লাহ কোন কঠোরতা আরোপ করেননি। বরং তিনি এমন নীতি-নিয়ম প্রবর্তন করেছেন যা মেনে চলা মানুষের জন্য অত্যন্ত সহজ এবং এর ফলে মানুষ কোন কষ্ট, অভাব ও সংকীর্ণতার মুখোমুখি হবে না।

→ নিসা ১৩-১৪ : এগুলো আল্লাহর নির্ধারিত সীমা। যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের আদেশমত চলে, তিনি তাকে জান্নাত সমূহে প্রবেশ করাবেন, যেগুলোর তলদেশ দিয়ে স্রোতস্বিনী প্রবাহিত হবে। তারা সেখানে চিরকাল থাকবে। এ হল বিরাট সাফল্য| যে কেউ আল্লাহ্ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি।

→ নিসা ১৭৬ : লোকেরা তোমার কাছে পিতা-মাতাহীন নিসন্তান ব্যক্তির *২২০ ব্যাপারে ফতোয়া জিজ্ঞেস করছে। বলে দাও, আল্লাহ তোমাদের ফতোয়া দিচ্ছেনঃ যদি কোন ব্যক্তি নিসন্তান মারা যায় এবং তার একটি বোন থাকে, *২২১ তাহলে সে তার পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধাংশ পাবে। আর যদি বোন নিসন্তান মারা যায় তাহলে ভাই হবে তার ওয়ারিস। *২২২ দুই বোন যদি মৃতের ওয়ারিস হয়, তাহলে তারা পরিত্যক্ত সম্পত্তির দুই-তৃতীয়াংশের হকদার হবে, *২২৩ আর যদি কয়েকজন ভাই ও বোন হয় তাহলে মেয়েদের একভাগ ও পুরুষের দুইভাগ হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সুস্পষ্ট বিধান বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা বিভ্রান্ত না হও এবং আল্লাহ সবকিছু সম্পর্কে জানেন। 

২২০)মূল বাক্যে কালালা শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। ‘কালালা’ শব্দের অর্থের ব্যাপারে মতবিরোধ রয়েছে। কারো কারো মতো কালালা হচ্ছে এমন এক ব্যক্তি যার সন্তান নেই এবং যার বাপ-দাদাও বেঁচে নেই। আবার অন্যদের মতে যে ব্যক্তি নিছক নিসন্তান অবস্থায় মারা যায় তাকে কালালা বলা হয়। হযরত উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু শেষ সময় পর্যন্ত এ ব্যাপারে দ্বিধান্বিত ছিলেন। কিন্তু হযরত আবু বকর সিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতে প্রথমোক্ত লোকটিকেই কালালা বলা হয়। সাধারণ ফকীহগণ তাঁর এই মত সমর্থন করেছেন। কুরআন থেকেও এই মতেরই সমর্থন পাওয়া যায়। কারণ কুরআন কালালার বোনকে পরিত্যক্ত সম্পত্তির অর্ধেকের মালিক বানানো হয়েছে। অথচ কালার বাপ বেঁচে থাকলে বোন সম্পত্তির কিছুই পায় না।

২২১)এখানে এমন সব ভাইবোনের মীরাসের কথা বলা হচ্ছে যারা মৃতের সাথে মা ও বাপ উভয় দিক দিয়ে অথবা শুধুমাত্র বাপের দিক দিয়ে শীরক। হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু একবার তাঁর এক ভাষণে এই অর্থের ব্যাখ্যা করেছিলেন। কোন সাহাবা তাঁর এই ব্যাখ্যার সাথে মতবিরোধ করেননি। ফলে এটি একটি সর্বসম্মত মতে পরিণত হয়েছে।

২২২)অর্থাৎ ভাই তার সমস্ত সম্পদের ওয়ারিশ হবে, যদি কোন নির্দিষ্ট অংশের অন্য কোন অধিকারী না থেকে থাকে। আর যদি নির্দিষ্ট অংশের অন্য কোন অধিকারী থাকে-যেমন স্বামী তাহলে প্রথমে তার অংশ আদায় করার পর অবশিষ্ট পরিত্যক্ত সম্পত্তি ভাই পাবে।

২২৩)দু’য়ের বেশী বোন হলে তাদের সম্পর্কেও এই একই বিধান কার্যকর হবে।

এখানে যা বলা হয়েছে তা সংক্ষেপে

১. মীরাসে আল্লাহ প্রদত্ত আইনের গভীর তত্ত্ব যারা জানতে সক্ষম নয়, এব্যাপারে যাদের জ্ঞান অজ্ঞতার পর্যায়ভূক্ত, এবং যারা অপরিপক্ষ বুদ্ধি দিয়ে আল্লাহর আইনের ত্রুটি (!) দূর করতে চায়, তাদের কে যাবধান করা হয়েছে।

২. আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণকারীরা আল্লাহর পাকড়াও থেকে রেহাই পাবে না।

৩. আল্লাহ যে নিয়মাবলী বর্ণনা করেছেন তা একেবারে নির্ভূল।

৪. তিনি কঠোরতা অবলম্বন করেন নি, যেসব আইন তিনি দিয়েছেন সেগুলো মানা মানুষের জন্য সহজ।

৫. আল্লাহর বিধান মান্য কারীদের জন্য জান্নাতের ওয়াদা করা হয়েছে।

                                                                                                             লেখাটি ভাল লাগলে নিচে কমেন্ট করবেন......

Friday 4 March 2011

আপনার ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট এর সব কিছু এখন ব্যাকআপ রাখুন নিজের কম্পিউটার অথবা ই-মেইলে


                 
নানা কারণে অনেকের ফেইসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ অ্যাকাউন্ট বন্ধ হওয়া মানে অ্যাকাউন্টের সব তথ্য চিরতরে হারিয়ে যাওয়া! এসব তথ্যের নিরাপত্তার জন্য ফেইসবুক থেকে তথ্যগুলো ডাউনলোড করে ব্যাকআপ হিসেবে রাখতে পারেনসম্প্রতি ফেইসবুকের চালু করা হয়েছে 'ডাউনলোড ইওর ইনফরমেশন' সুবিধাএর মাধ্যমে ফেইসবুকের তথ্যগুলো ডাউনলোড করে রাখা যায়

যে ভাবে ব্যাকআপ করবেন
ডাউনলোড করার জন্য প্রথমে আপনার ফেইসবুক অ্যাকাউন্টে লগ-ইন করুনএবার হোমপেইজের ওপর ডানপাশে
Accounts-
এ ক্লিক করুন
এখান থেকে Account Settings-এ ক্লিক করুন
নতুন যে পেইজটি খুলবে তার একেবারে নিচে
Download your information
নামে একটা ট্যাব পাবেন

সেখানকার Lear more লেখার উপর ক্লিক করুনএরপর Download বাটনে একটি ক্লিক করুন,


এখন আবার Download বাটনে একটি ক্লিক করুন

এবার ফেইসবুকে দেওয়া ই-মেইল অ্যাকাউন্টে আসা একটি মেইলে একটা লিংক পাবেন (মেইল পেতে কয়েক ঘণ্টা দেরি হতে পারে)লিংকটিতে ক্লিক করুননতুন যে পেজটি খুলবে সেখানে আপনার ফেইসবুকের পাসওয়ার্ডটি লিখুনএবার ডাউনলোডে ক্লিক করলে আপনার ফেইসবুকের তথ্যগুলো ডাউনলোড হওয়া শুরু করবে

ব্যাকআপ ফাইল যেভাবে দেখবেন
ডাউনলোড হওয়া তথ্যের ফাইলটি জিপ ফাইল হিসেবে থাকবেপ্রথমে সেটি আনজিপ করুনএবার যে ফাইলটি ওহফবী নামে পাবেন সেটি কোনো ওয়েব ব্রাউজার দিয়ে খুলুন (ওপেন উইথ থেকে ব্রাউজার নির্বাচন করতে হবে)এবার ফাইলটির অফলাইনে তথ্যগুলো দেখতে পারবেনঅ্যালবাম ফোল্ডারে ছবিগুলো পাবেন

পোষ্টটি দেখার জন্য ধন্যবাদ...
ভাল লেগে থাকলে কমেন্ট করলে খুশি হব....।

আপনার কম্পিউটার এর স্ক্রীন সেভ করার জন্য দারুন একটি সফটওয়্যার


.


যখন আমরা কোনো ব্লগ এর জন্য কন্টেন্ট লিখি বা কোনো টিউটোরিয়াল ওয়েবসাইট এর জন্য কোনো টিউটোরিয়াল লিখি তখন মাঝে মাঝে আমাদেরকে আমাদের কম্পিউটার থেকে কোনো তথ্য বা ছবি ইমেজের মাধ্যমে সংযুক্ত করতে হয়  এটা করার জন্য আমাদের অধিকাংশই উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের বিল্ট-ইন ব্যবস্থাটি গ্রহন করে থাকেন  এটা খুবই সহজ ও সাধারণ একটা মাধ্যম  আপনাকে শুধু কি-বোর্ড এর PrtSc SysRq বা Printscreen বাটন চাপতে হবে  তাহলে আপনার মনিটরের স্ক্রীণটি ক্লীপবোর্ড-এ জমা হয়ে থাকবে এখন আপনি “Start>AllPrograms>Accessories>Paint” যান তারপর সেখানে “ctrl+v” চাপুন অথবা “Edit>Paste” এ যান এখানে আপনি আপনার capture করা স্ক্রীনটা দেখতে পাবেন  আপনি ইচ্ছা করলে *.jpg বা *.bmp বা অন্য যে কোনো ফরম্যাট এ ইমেজ সেভ করতে পারবেন  আপনি ইচ্ছা করলে select tool ব্যবহার করে capture করা স্ক্রীনটার যে কোনো একটা অংশও ইমেজ হিসাবে সেভ করতে পারবেন সেভ করার জন্য “File>Saveনামক অপশন এ গিয়ে সেভ করুন 
কিন্তু এই উপোরোক্ত পদ্ধতিটা আপনার অনেক সময় নষ্ট করে দেবে  যদি কোনো কারণে আপনাকে অনেক ইমেজ নিয়ে কাজ করার দরকার হয়ে পড়ে তাহলে আমি নিশ্চিত যে আপনি যথেষ্ট পরিমাণে বিরক্ত বোধ করবেন 
আমি আপনাকে একটা সফটওয়্যারের সন্ধান দিব যার মাধ্যমে আপনি আপনার এই সমস্যা সমাধান করতে পারবেন বাজারে আপনি অনেক সফটওয়্যার পাবেন  কিন্তু ব্যাক্তিগতভাবে আমার পছন্দ হল Gadwin Printscreen 4.4. এই সফটওয়্যারটির মাধ্যমে আপনি আপনার কম্পিউটার এর স্ক্রীণ capture করবার সময়ই নির্ধারণ করে দিতে পারবেন যে কতটুকু জায়গা আপনি capture করতে চাচ্ছেন  সেই হিসাবে কী-বোর্ড থেকে নির্দিষ্ট একটা কী চাপলেই নির্দিষ্ট একটা লোকেশন এ আপনার ইমেজ সেভ হয়ে যাবে  আপনাকে আর কষ্ট করে Paint খুলে ইমেজ কাটাকাটি করতে হবে না  আপনি ইচ্ছা করলে কম্পিউটার এর নির্দিষ্ট একটা এরিয়াও আগে থেকে সিলেক্ট করে রাখতে পারবেন যে কী চাপার সাথে সাথে কতটুকু জায়গা সেভ হবে আবার কোন কী টা চাপলে স্ক্রীন সেভ হবে সেটাও আপনি আগে থেকে নির্ধারণ করে রাখতে পারবেন  এই সফটওয়্যারটা আপনি ইন্টারনেট থেকে ফ্রী ডাউনলোড করতে পারবেন ডাউনলোড এর লিঙ্ক হচ্ছেঃ http://www.gadwin.com/download/pspro_setup.exe
ডাউনলোড হবার পর অন্য সফটওয়্যার এর মত করে এটাকে ইন্সটল করুন  খুব সহজেই ইন্সটল করতে পারবেন  
preference page থেকে স্ক্রীন capture  রার জন্য আপনার পছন্দনীয় Hot Key নির্বাচন করুন এখানে আপনি আর অনেক অপশন পাবেন  আপনি capture করার সময় মাউস এর কার্সরকে লুকিয়ে রাখতে পারবেন
Source বাটন এ ক্লীক করলে আপনি ৪টি captured area অপশন দেখতেপাবেন  এক্ষেত্রে আমার সাজেশন হল Rectangular Area নির্বাচন করা  কারণ তাহলে আপনি প্রতিবার capture এর সময় সাইজ নির্ধারণ করে দিতে পারবেন
Destination বাটন এ ক্লীক করে আপনি ইমেজগুলো কোথায় গিয়ে সেভ হবে তা নির্ধারণ করে দিতে পারবেন 
Image অপশন থেকে আপনি ইমেজগুলো কোন ফরম্যাট এ সেভ হবে তাও নির্ধারণ করে দিতে পারবেন 
আর এভাবেই আপনি আপনার ইমেজ capture করার পদ্ধতিকে খুব সহজ করে তুলতে পারবেন  আশা করছি যে পোষ্টটি আপনার ভাল লেগেছে  
(c+p) Samu......